হত্যাকারীরা ও জঙ্গীরা ইসলামেরই ধারক ও বাহক

শোভন রেজা

 

অনেকদিন ধরে ইসলামী সন্ত্রাসবাদের পিছনে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং এই বিশ্বাসের উৎস হিসেবে কুরআন-হাদিসকে প্রমাণ করে দেখানোতে এক শ্রেণীর মানুষের কাছে নাস্তিকরা ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। ইসলামী সন্ত্রাসের পিছনে সাম্রাজ্যবাদ, তেল-গ্যাস, আফগানিস্তানের যুদ্ধই মূল কারণ- এমনটাই দাবী ‘ইসলামপ্রেমিদের’। এক মডারেট প্রশ্ন করেছিলো, সুরা তওবা, আনফাল পড়ে মুসলমানরা যদি সন্ত্রাসী হবেই তাহলে আফগানিস্থানে আমেরিকার আগ্রাসনের আগে জিহাদ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েনি কেন? সেই লোককে বলেছিলাম, আবদুল ইবনে ওহাব (জন্ম-১৭০৩, মৃত্যু-১৭৯২) সালাফিবাদ প্রচারের আগে যে বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেছিলেন সেটি পড়া থাকলে আর কানার মত হাতড়ে হাতড়ে এইসব আবলতাবল বকতেন না…। সুইডেন প্রবাসী এক ভাম আমাকে নিয়ে ইস্টিশন ব্লগে সিরিজ লিখেছিলো এই প্রেক্ষিতেই। তাদের এক কথা ইসলামী সন্ত্রাসবাদ তথা জঙ্গিবাদের পিছনে মার্কিনদের রাজনীতি, তেল-গ্যাস লুটের ইউরোপীয়ানদের মতলব ইত্যাদি কারণে ঐ অঞ্চলে একটা গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে মাঝখান থেকে সাম্রাজ্যবাদীরা খনিজ সম্পদ হাতিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মের আসলে কোন ভূমিকাই নেই…।

ইসলামী সন্ত্রাসের ব্যাখ্যা ইসলামী অথেনটিক সোর্স থেকেই বহুবার দেখিয়েছি। বার বার বলার চেষ্টা করেছি ইসলামিক সন্ত্রাস একান্তই মুসলমানদের ধর্মীয় সমস্যা। এসব কারণেই পাকিস্তান বহু মসজিদ জঙ্গিবাদের কেন্দ্র হিসেবে বন্ধ করে দিয়েছে। মসজিদকে নজরদারীর আওতায় আনা সব মুসলিম কান্ট্রিতে একটি চরম বাস্তবতা। ইসলামিক পর্দার অংশ হিসেবে বোরখা সুযোগ নিয়ে বোমাবাজীর ঘটনায় বোরখা নিষিদ্ধ করেছে আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলো। বাংলাদেশ সরকার জঙ্গিবাদের জন্য ইহুদীনাসাদের দায়ী করলেও জুম্মার বয়ানের উপর নজরদারী করার কথা ভেবেছিলো। সর্বশেষ পাকিস্তানের ঘটা সাম্প্রতিক একটি ঘটনা ইসলামি সন্ত্রাসবাদের উপর মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের একচেটিয়া স্বত্ত্ব প্রমাণিত করেছে আরেকবার। পাকিস্তানের একটি প্রদেশের আইনমন্ত্রী জঙ্গি তথা জিহাদীদের থ্রেট পাওয়ার পর তার নিরাপত্তা জোরদার করতে সরকারের কাছে ফোর্স চেয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রীর শর্ত ছিলো, তার জন্য নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীতে কোন মুসলিম সদস্য থাকতে পারবে না…।

ইসলামি সন্ত্রাস একান্তই মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে বলেই ফ্রান্সে জঙ্গি হামলা হলে, লন্ডন, স্পেন, মুম্বাই এসব স্থানে জঙ্গি হামলা হলেও বড় কোন টুর্নামেন্ট বা বিনোদন আয়োজন বাতিল হয় না। কিন্তু পাকিস্তান বার বার নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়ার পরও বড় ধরণের আর্ন্তজাতিক কোন টুর্নামেন্ট, বিনোদন আয়োজনে বিশ্ববাসী যেতে চায় না। বাংলাদেশে গুলশান হামলার পরও এরকম সন্দেহ তৈরি হয়েছিলো। মিরপুর স্টেডিয়ামে আর্ন্তজাতিক কোন ক্রিকেট আসর বা বড় কোন সংগীত আয়োজন যে পুলিশ বাহিনী নিরাপত্তা দিবে তাতে মেন্দি লাগানো লাল দাড়ির পুলিশ র্যা ব- কে যে কোন ইসলামে বিশ্বাস করে সেই গ্যারান্টি কে দিবে? নিরাপত্তা দেয়ালের একটি ইটই যথেষ্ঠ ফোকর তৈরি করে সন্ত্রাসীদের সুযোগ করে দিতে। তাছাড়া বেড়ায় ক্ষেত খাবার কথাটা তো আছেই। পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী তার নিরাপত্তা বাহিনীর মুসলিম সদস্যদের কে যে তালেবান বা আইএসের অনুরক্ত সেটা তো জানেন না। তাই তিনি কোন মুসলিমকেই তার নিরাপত্তার জন্য নিতে চাননি। কোন অমুসলিম যদি এই শর্ত আরোপ করত যে, তার নিরাপত্তায় কোন মুসলমানকে তিনি বিশ্বাস করেন না- তাহলেই সেটা হয়ে যেতো মুসলিম বিদ্বেষ! যেমন ফ্রান্স বোরখা নিষিদ্ধ করলে মুসলিম বিদ্বেষ কিন্তু আফ্রিকা একই কাজ করলে কোন শব্দ নেই…।

তালেবান, আইএস, আল কায়দা, লস্কর, আনসার ইত্যাদি দলগুলো ইসলাম প্রেমি ধার্মীকদের নিয়েই তৈরি হয়। তবু মডারেট মুসলমান, ভদ্র নাস্তিক, ভামপন্থি ব্লগাররা তাদের একচোখা বিশ্লেষণ জারি করেই যাবে…।